নতুন কিছু শিখে তারপর তা কাজে লাগাবেন, নাকি কাজ করতে করতেই শিখে নিবেন? কোনটা ভালো? শেখার সময় কিভাবে বের করবেন? এসব নিয়েই আমার মতামত জানাব এ লেখাতে।
দ্রষ্টব্যঃ এ লেখাটি প্রোগ্রামার/সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার/ডেভেলপারদের লক্ষ করে লেখা হয়েছে।
প্রোগ্রামিং ডোমেইনটি একটি প্র্যাক্টিক্যাল ডোমেইন। এখানে মুখস্থ বিদ্যা জিনিস টা গুরুত্বপূর্ণ নয়। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা। এখানে শুধু বই পড়ে বা ডকুমেন্টেশন পড়ে লাভ নেই; যদি না আপনি তা সাথে বাস্তব প্রয়োগ করেন।
শেখার বড় উপায় হল যা শিখছেন তা দিয়ে কিছু তৈরি করা। 🚀
প্রোগ্রামিং ভাষা শিখতে চান? তা দিয়ে ছোট প্রোগ্রাম তৈরি করুন। তা দিয়ে প্রোগ্রামিং সমস্যা সমাধান করুন। ফ্রেমওয়ার্ক শিখতে চান? ছোট কোনো প্রোজেক্ট তৈরি করুন। কোনো আইডিয়া না পেলে Todo App তৈরি করুন। ডকুমেন্টেশন এ API এবং তার ব্যবহার দেখানো থাকে। সব ধরনের ব্যাবহার এবং কর্নার কেস খুব কমই দেওয়া থাকে। এজন্যই তো Stack Overflow আছে। যেখানে মানুষেরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে উত্তর দেন; সব কিন্তু ডকুমেন্টেশন থেকে নয়।
চা/কফি খান; আর কিছু একটা বানান। ☕ 😁
তো Rule Of Thumb হচ্ছে যা শিখতে চাচ্ছেন, তার প্র্যাক্টিক্যাল ওয়ে বের করুন। কোডল্যাব থাকলে কোডল্যাব ট্রাই করুন। সমস্যা সমাধান করতে করতে শেখা (যেমনঃ Kotlin Koans ইত্যাদি) জাতীয় কিছু থাকলে তা চেষ্টা করুন। প্র্যাক্টিস করুন।
প্রফেশনাল লাইফে ৮-৯ ঘন্টা কাজ করে ফ্যামিলিকে সময় দিতে হলে নিজের শেখার জন্য তেমন সময় পাওয়া যায়না। যা সময় পাওয়া যায় তা পরিবার এবং নিজের আধ্যাত্মিক উন্নয়নে কাজে লাগানো উচিত।
# সমস্যা 🐞
তো শিখাটা হবে কখন? সব টেকনোলজি এখন দ্রুত আপডেট হচ্ছে। নতুন নতুন টেকনোলজি আসছে। বেস্ট ওয়েতে কাজ করতে হলে অবশ্যই জানতে হবে কোনো ফ্রেমওয়ার্কে নতুন কি এসেছে? কোনো প্রোগ্রামিং ভাষার নতুন সংস্করণে নতুন কি এসেছে? বেস্ট ডেভেলপাররা কি নিয়ে কাজ করছেন? বেস্ট প্র্যাক্টিস বর্তমানে কোনটি? নতুন ভার্সনে কি কি পরিবর্তন এসেছে? ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। 🤯
এখন যদি অফিসের সময়ে যদি নতুন জিনিস শিখায় সময় দেন তাহলে তো ডেডলাইন মিস হয়ে যেতে পারে! যদি কাজের পর সময় পাওয়া যায় তা আলাদা কথা। কিন্তু আমার মত যদি কাজ ছাড়া টাইম নাই পান তখন? 🤔
# সমাধান 💊
এক্ষেত্রে দুটো সমাধান হতে পারেঃ
- সাপ্তাহিক ছুটি কাজে লাগানো
- যা শিখতে চান তা নিয়েই কাজ করা
# 1. সাপ্তাহিক ছুটি কাজে লাগানো
সব স্ট্যান্ডার্ড সফটওয়ার ফার্মেই ২দিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকে। এই সাপ্তাহিক ছুটি চাইলেই কাজে লাগানো যায় প্ল্যান করে। ছোট প্রজেক্ট বানাতে পারেন। লাইব্রেরি বানাতে পারেন। বই পড়তে পারেন।
# 2. যা শিখতে চান তা নিয়েই কাজ করা
যা নিয়ে কাজ করতে চান তা যদি আপনার প্রোজেক্ট এর সাথে সম্পর্কিত হয় তাহলে প্রোজেক্ট ম্যানেজার/ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে নতুন টেকনোলজিটি কেনো ব্যবহার করা উচিত তা বুঝিয়ে রানিং অথবা পরের প্রোজেক্টে ব্যবহার করুন। হয়ত কিছুটা সময় বেশী লাগবে প্রোজেক্ট শেষ করতে। কিন্তু দিন শেষে আপনারও শেখা হবে, টেকনোলজিটা অসাম হলে প্রোজেক্টটিও ভালো হবে। এতে কাজ করার স্পৃহাও বাড়বে।
কোনো কাজ যখন passion এবং উৎসাহ (enthusiasm) দিয়ে করা হয় তা সবসময় ভালো হয়।
তো নতুন কোনো টেকনোলজি নিয়ে যদি আপনি উৎসাহিত হয়ে কাজ করেন তা অসাম হবেই।
এছাড়া হোম-অফিস হলে প্রতিদিন অফিসের পরে ১-২ ঘন্টা করে সময়ও দেয়া যায়। প্রোগ্রামিং লাইনটা এমন যে, কিছু একটা নিয়ে বসলে তা শেষ না করে উঠতে ইচ্ছা করেনা; বা মনেই থাকেনা ৩-৪ঘন্টা কখন হয়ে গেছে! তাও চেষ্টা করা সময়সীমা ঠিক রাখার।
নিজের কাজকে এঞ্জয় করতে হবে। কাজ এঞ্জয় না করলে ডেডিকেটেড হওয়া কঠিন। ডেডিকেটেড হলে শেখা এবং বেস্ট কাজ করা — দুটোই একত্রে করা সহজ হয়।
# ডেডিকেশন কি?
ডেডিকেশন হল কোনো কাজ মনোযোগ দিয়ে করা; নিজের মনে করে কাজ করা; pro-actively কাজ করা।
সমস্যার অংশ না হয়ে সমাধানের অংশ হোন।
সমস্যা নিয়ে পড়ে না থেকে সমাধান কি হবে তা নিয়ে কাজ করাও ডেডিকেশনের মধ্যে পড়ে। যা নিয়ে কাজ করবেন তা নিজের মনে করেই কাজ করবেন। যা করছেন তা যদি পছন্দ না করেন তাহলে মুলত এটি সম্ভব হয় না।
যা ভালোবাসেন তা নিয়ে কাজ করুন। যা নিয়ে কাজ করছেন তা ভালোবাসুন।
# পরিবার
একটি উক্তি পেয়েছিলাম এরকম:
আপনি যদি এখনি মারা যান আপনার পদ এক সপ্তাহের মধ্যে অন্য একজনকে বসিয়ে দিবে কোম্পানি।
কথাটি কিন্তু কঠিন সত্যি। “কাজ” জীবন হওয়া উচিত না। কাজ “জীবনের” শুধু একটি অংশ হওয়া উচিত। পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। যা করছেন তা তো পরিবারের জন্যই; একটু ভালো থাকার জন্যই। জেগে থাকার প্রতিটি মুহুর্ত যদি কাজেই চলে যায় তো সফলতা কোথায়!?
# আধ্যাত্মিকতা
আমরা বিশ্বাস করি আল্লাহ একমাত্র প্রভু, সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। আল্লাহ চাইলেই সব সম্ভব; না চাইলে তা অসম্ভব। শেখার ক্ষেত্রেও তাই আল্লাহর উপরই আমাদের ভরসা থাকে। আমরা চেস্টা করে যাব, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।
প্রোগ্রামিং দুনিয়াবি জ্ঞ্যান, যা আখিরাতে সরাসরি কাজে দিবেনা। তাই প্রতিদিন আমাদের উচিত ইসলামী জ্ঞ্যান অর্জনেও কিছু সময় দেওয়া। প্রতিটি ভালোকাজ ইবাদত হতে পারে। কিন্তু কিভাবে তা তো জানতে হবে! জানার জন্য আমাদের এদিকেও সময় দিতে হবে। কাজের জন্য নামাজ সহ অন্য ফরজ কাজ বাদ দেওয়া যাবেনা।
কাজের সময় চিন্তা করতে হবে কাজ ঠিক ভাবে করাটা আমার উপর যে কাজ দিয়েছে তার হক। হক আদায় না করলে পরকালে তারও জবাব দিহিতা করতে হবে। ইনকাম হালাল হবেনা।
আল্লাহ আমাদের সফলতা দান করুন। আমিন।
পরিশেষে, এগুলা আমার মতামত মাত্র। কোনো গবেষনার ফলাফল নয়। আমার চিন্তায় ভুল থাকলে আমাকে জানাতে পারেন। জানাতে পারেন আপনার মতামত।
আপনার এসব নিয়ে মতামত কি? আপনি কি শিখে কাজ করেন? নাকি করতে করতে শিখেন? আপনার মন্তব্য জানান…